নিস্তব্ধ রাস্তা | Nistabdha Rasta | Bangla Bhuter Golpo | Ghost Stories in Bengali



নিস্তব্ধ রাস্তা | Nistabdha Rasta



সদ্য মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছি, স্কুল এখন ছুটি। পাড়ার বন্ধুরা মিলে ঠিক করলাম ক্যাটারিং এর কাজে যাবো। ১৭০ টাকা করে দেবে। বাড়িতে বললাম কিন্তু ছাড়তে চাইছেনা। বলছে এই বয়সে কাজে যেতে হবেনা। কলকাতার রাস্তা কখন কি বিপদ হয়ে যায়, একদম যেতে হবেনা। অনেক কষ্ট করে বুঝিয়ে মাকে রাজি করলাম। আমার দায়িত্ব শেষ এবার মা বাবাকে রাজি করবে। অবশেষে বাবাও রাজি হয়ে গেল। পরের সোমবার থেকে যাবো। আমাদের পাড়া থেকে আমি আর অর্পণ যাবো। বাকি সুমন আর তাপস পাশের পাড়া থেকে যাবে।

অবশেষে সেইদিন চলে এলো আমরা দুপুরবেলা স্নান করে খাওয়াদাওয়া করে বের হবো। ১.৩০ এর ট্রেন, বাড়ি থেকে স্টেশন যেতে সাইকেলে ১৫ মিনিট লাগে। ১ টার সময় বের হব সবাই। আমরা সবাই নতুন যাচ্ছি সুমন সব চেনে কোথায় যেতে হবে কার সাথে যেতে হবে। ধরতে গেলে আমরা যাচ্ছি সুমনের সাথেই। খুব ভালো লাগছিল জীবনে প্রথম কাজে যাচ্ছি তাও আবার কলকাতায়। কলকাতায় এই প্রথম যাচ্ছিনা আগেও গিয়েছি অনেকবার সোনারপুর এ মাসীর বাড়ি। তবে একা না মায়ের সাথে। আর এখন যাচ্ছি বন্ধুদের সাথে।

সাইকেলে নিয়ে সবাই একসাথে বেরিয়ে গেলাম ঠিক ১ টা। ঠিকঠাক সময়ে স্টেশনে চলে গেলাম টিকিট কেটে ট্রেনে করে গিয়ে গড়িয়া স্টেশনে নামতে হবে, সেখান থেকে বাসে করে যেতে হবে হোটেলে যেখানে পার্টি হবে। ঠিক সময়ে হোটেলে পৌঁছে গেলাম। কাজ শুরু হয়ে গেল। আমাদের কাজ ছিল ড্রিঙ্কস দেওয়া। রাত্রি ১০ টা পর্যন্ত কাজ করতে হবে। তারপর যদি করা হয় সেটা এক্সট্রা আর তার টাকা দেবে ডবল। প্রথম দিন তাই ১০ টার সময় বেরিয়ে গেলাম। আমরা সকলেই চলে আসলাম।

শিয়ালদহ থেকে একেবারে শেষ ট্রেনে বাড়ি ফিরতে হবে। পার্ক সার্কাস স্টেশন থেকে ট্রেন ধরতে হবে। ট্রেন একেবারে ফাঁকা ছিল তাই সবাই বসার জায়গা পেয়ে গেলাম। বেশ মজা করেই ফিরলাম। স্টেশন থেকে সাইকেল নিয়ে ফিরছি, বাড়ি থেকে কিছু দূরে একটা ফাঁকা রাস্তা আছে সেই রাস্তা দিয়ে ফিরতে হবে। এটা দিয়ে গেলে একটু তাড়াতাড়ি হয়। মেইন রোড দিয়ে গেলে একটু দেরি হয়ে যায় আর তার উপর মেইন রোড দিয়ে রাতেরবেলা বড়ো বড়ো গাড়ি যায়, তাই গ্রামের ভিতরের এই রাস্তা দিয়ে যায় সবাই। তবে রাস্তাটা পুরোটা গ্রামের ভিতর দিয়ে গিয়েছে। শুধু একটা জায়গায় অনেকটা ফাঁকা রাস্তা ওই জায়গাটায় একটু ভয় লাগে তার উপর এত রাত। রাস্তা পুরো ফাঁকা শুধু আমরা চারজন যাচ্ছি।

রাস্তায় হালকা কুয়াশা। একদম নিঝুম রাস্তা কোথায় কোনো আওয়াজ নেই শুধু আমাদের সাইকেলের চাকার রাস্তায় ঘষার খচ খচ আওয়াজ আর মাঝে মাঝে একটু দূরের পাড়া থেকে কুকুর ডাকার আওয়াজ। কারো মুখে কোন কথা নেই সবাই চুপচাপ যাচ্ছি। হঠাৎ আমার খেয়াল হলো পাশের বাগানে দুদিন আগে রতন কাকুর বউ গলায় দড়ি দিয়েছিল। আর মনে পড়া মাত্রই চারজন একসাথে বাগানের দিকে তাকাতেই যা চোখে পড়লো তাতে চারজনের হাত পা ঠান্ডা হয়ে গেলো।

বাগানের ভিতরের শিরীষ গাছটা আমাদের ফোনের আলোতে হালকা হালকা দেখা যাচ্ছিল। তার উপর হালকা কুয়াশা তাতে চোখে পড়লো কোনো একটা মহিলা সাদা কাপড় পড়ে গাছের ডালে গলায় দড়ি বেঁধে ঝুলছে আর চোখ দুটো ঠিকরে বেরিয়ে আসছে। জিভটা অনেকটা বেরিয়ে ঝুলছে। আমরা চারজন শরীরে যত শক্তি আছে সব শক্তি দিয়ে সাইকেল চালিয়ে কোনমতে পাড়ায় ঢুকলাম। ঢুকে কিছুক্ষণ সবাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে, কারো মুখে কোন কথা নেই। তারপর সুমন প্রথম বলা শুরু করলো, শোন কাউকে কিছু বলার দরকার নেই সারাদিন কাজ করার জন্য শরীর ক্লান্ত আর আর তারপর আমরা ওটা নিয়ে চিন্তা করছিলাম তাই হয়ত আমাদের মনে হয়েছে ওখানে রতন কাকুর বউ গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে একবার বাগানের দিকে যাবো আর গিয়ে দেখে আসবো ওটা আসলে কি ছিল। সুমনের কথা সবাই মেনে নিল। আর একটা কথা ভেবে বাড়িতে জানানো হল না যে এমনিতেই কারোর বাড়ি থেকে ছাড়তে চাইছিলনা তার উপর এই কথা শুনলে আরো যেতে দেবেনা। সবাই যে যার বাড়ি চলে গেলো আমিও বাড়ি গিয়ে খেয়ে শুয়ে পড়লাম। কিছুক্ষণ ঘুম আসছিলনা ওই কথাটাই বার বার মনে পড়ছে তারপর কখন যে ঘুমিয়ে পরলাম।

সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ করতে করতে চারজনে গেলাম বাগানে দেখতে। গিয়ে আমরা যা দেখতে পেলাম তাতে নিজেদের উপরেই হাসি পেল। আগেরদিন কেউ বাগানে পাতা ঝাঁট দিয়ে একটা সাদা বড়ো বস্তায় করে গাছের গায়ে হেলান দিয়ে রেখে দিয়েছে আর আমরা চারজন সেটা দেখেই কাল রাতে ভয়ে পড়ি কি মরি করে সাইকেল চালিয়ে বাড়ি গিয়েছি। ভাগ্যিস কাউকে বলিনি নাহলে আমাদের উপরে যা হাসাহাসি করতো সবাই।

দুপুরে স্নান করে খেয়ে নিয়ে আবার ১ টায় সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে গেলাম চারজন। টিকিট কেটে ট্রেনে করে হোটেলে পৌঁছে গেলাম। ১০ টায় বেরিয়ে পার্ক সার্কাস থেকে শেষের ট্রেন ধরে ফিরলাম। সাইকেল নিয়ে চারজন গল্প করতে করতে যাচ্ছি। গল্প আর কি আগেরদিন এর ঘটনাটা নিয়ে হাসাহাসি করতে করতে যাচ্ছি। আবার সেই বাগানের কাছে পৌঁছে গেলাম আবারো সেই আগের দিনের মতো দেখতে পেলাম। কিন্তু আজকে কুয়াশা নেই তার উপর চারজনের ফোনে আলো জ্বলছে। আলোটা বাগানের দিকে ঘোরাতেই স্পষ্ট দেখতে পেলাম ফোনের আলোতে না গাছের গায়ে হেলান দেওয়া সেই বস্তা নেই গাছের ডালে রতন কাকুর বউ ঝুলছে। আর আগেরদিন অল্প আলোতে দেখেছিলাম যে জিভটা বেরিয়ে আছে, আজ তা আর নেই। কেমন যেনো হাসছে আমাদের দেখে। সেই বিস্ফারিত চোখ। আগেরদিন ভয়ে গায়ের জোরে সাইকেল চালিয়ে কোনমতে বাড়ি গিয়েছিলাম আজকে আর পারলাম চারজন প্রায় সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা। এরমধ্যে তাপস বাঁচাও বাঁচাও বলে জোরে জোরে চিৎকার করতে লাগলো। আমাদের বাকি তিনজনের গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হোলনা। আমি জ্ঞান হারালাম।

যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল হয়ে গেছে। আর আমি বিছানায় শুয়ে আছি। আমার চোখ খুলতে দেখে মা বলতে আরম্ভ করলো আর যদি কোনোদিন ক্যাটারিং যাওয়ার কথা বলেছিস তো ঠ্যাং ভেঙে বাড়ি বসিয়ে রেখে দেবো ইত্যাদি ইত্যাদি। বিছানা থেকে উঠে ব্রাশ টা মুখে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখলাম বাইরে তাপস, অর্পণ, সুমন বসে আছে মনে হয় আমার আসার অপেক্ষা করছিল। আমি ওদের জিজ্ঞেস করলাম যে কি হয়েছিল। সুমন আর অর্পণ চুপ। তাপস বললো আমার চিৎকার শুনে পাশের পাড়া থেকে দু তিনজন ছুটে আসে আর আমাদের বাড়ি পৌঁছে দেয়। তারপর আমরা শুনলাম যে আগেরদিন সন্ধেবেলা থেকে আরো কয়েকজন দেখেছে ওরকম তাই দু তিনজন এসেছিল একা আসার সাহস পায়নি কেউ।

আমাদের ক্যাটারিং যাওয়া বন্ধ হয়েগেল। এই ঘটনার পরেরদিন রতন কাকু গ্রামের পুরোহিতের কথা অনুযায়ী গয়ায় গিয়ে পিন্ডি দিয়ে আসলো। তারপর থেকে আর কোনোদিন কিছু দেখা যায়নি।

ধন্যবাদ বন্ধুরা। গল্পটি কেমন লেগেছে জানাতে ভুলবেননা। আর এখনও যদি আমাদের এই ওয়েবসাইট সাবস্ক্রাইব না করে থাকেন তো এখুনি মেইল আইডি দিয়ে সাবস্ক্রাইব করে নিন। এছাড়াও আপনি আমাদের ফেসবুক পেজে জয়েন করতে পারেন আরো সুন্দর সুন্দর গল্প পেতে।