কালীপূজার রাত | Kalipujar Raat | Bangla Bhuter Golpo | Ghost Stories in Bengali






কালীপূজার রাত | Kalipujar Raat




ভূতের গল্প কথাটি মনে পড়লেই সবার আগে মাথায় আসে ছোটবেলায় দাদুর কাছে সোনা সেই গল্পগুলো। খুব মিস করি সেই দিনগুলো। যাইহোক ছোটবেলায় দাদুর কাছে অনেক গল্প শুনতাম। সেইসব গল্প একজন আর কিছু মনে নেই। তবে কিছু কিছু গল্প ছিল যেগুলো দাদু বলতো যে সত্যি ঘটনা, কিন্তু আদৌ সত্যি কিনা জানিনা কিন্তু সত্যি ঘটনার গল্প যখনই শুনতাম খুব ভয় পেতাম।

আজ সেইসব সত্যি ঘটনার মধ্যে থেকে একটা গল্প আমি বলবো। তবে গল্পটি শুরু করার আগে একটি কথা বলে দি যে যদি গল্পটি ভালো লাগে তো অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে আর সেয়ার করবেন। যদি আপনি এরকম গল্প আরো পড়তে চান তো নিচে মেইল আইডি দিয়ে সাবস্ক্রাইব করবেন, তাহলে যখনই কোনো নতুন গল্প আসবে সেটি সবার আগে আপনার মেইলে চলে যাবে। আর আপনি যদি আপনার কোনো গল্প আপনাদের এই ওয়েবসাইটে দিতে চান তো কন্টাক্ট আস অপশনটিতে গিয়ে যে মেইল আইডি দেওয়া আছে সেই মেইলে গল্পটি পাঠাবেন, আমরা চেক করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওয়েবসাইট এ দিয়ে দেবো। তো চলুন গল্প শুরু করা যাক।

আমার বয়স্ এখন ২৫ বছর। গল্পটি আমার দাদুর কাছে ছোটবেলায় শুনেছিলাম আর দাদু যখন তরুণ ছিলেন তখন সেই ঘটনাটি তার সাথে ঘটেছিল (দাদুর কথা অনুযায়ী)। আর গল্পটি আমি বলবো দাদুর ভাষাতেই।

ঘটেছিলো কলিপুজাতে। কার্তিক মাস হালকা হালকা ঠান্ডা পড়েছিল বাইরে কুয়াশা। কালীপূজার তখনো পাঁচদিন বাকি। সাথে গিয়েছিলাম হাটে কালীপূজার বাজার করতে। সোম আর শুক্রবারে হাট বসতো। আমাদের গ্রাম থেকে দুটো গ্রাম পরেই ছিল হাট। পুজোর ফল, শাক সবজি, আর বাজি। বাজি বলতে তখন শুধু ফুলঝুরি ছিল আর প্রদীপ জ্বালানো হতো। প্রদীপ মা পুকুর থেকে মাটি তুলে বানিয়ে রোদে শুকাতে দিয়ে দিয়েছে। কালীপূজার এখনও পাঁচদিন বাকি আছে ততদিনে প্রদীপ রোদে শুকিয়ে জ্বালানোর উপযুক্ত হয়ে যাবে।

বাজার করে ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে গেছে। তখন ভূতের উপদ্রব ছিল খুব তার উপর কালীপূজা বলে কথা এখনকার দিনে তোরা তো আর সেসব মানিসনা। কিন্তু আমাদের সময় ভুত ছিল। বাবার সাথে গল্প করতে করতে ফিরছি। প্রায় চলে এসেছি সামনেই সনাতন মণ্ডলের বাঁশ বাগান ওটা পেরোলেই আপনাদের গ্রাম। গ্রামের আরো সবাই গিয়েছিল হাটে সবাই চলে এসেছে আমার ফুলঝুরি টা কিনতেই একটু বেশি দেরি হয়ে গেছে। দোকানে যা ভীর।

কাছে পূজার বাজার আছে মাছ নেই কোনো, তাই তেমন ভয়ের কিছু নেই। সনাতন মণ্ডলের বাঁশবাগান অনেক টা জায়গা জুড়ে আছে। এইজায়গতেই একটু ভয়। কালীপূজা তাই একেবারে ঘোর অমবাস্যা। দুজনে গল্প করতে করতে যাচ্ছি আপনাদের গ্রাম থেকে সন্ধ্যা দেওয়ার সময় শঙ্খ বাজানোর আওয়াজ শুনতে পাওয়া যাচ্ছে। হঠাৎ মনে হলো পিছনে কেউ একজন আসছে। বাবাকে বললাম বাবা আমাদের পিছনে কেউ মনে হয় আসছে। বাবা আমার হাতটা শক্ত করে ধরে বললো চুপ পিছনে তাকাবিনা। আমি তো খুব ভয় পেয়েগেলাম। হঠাৎ আমাদের পাশে থেকে কে যেন ছুটে চলে গেলো। পাশে তাকিয়ে দেখলাম কিছু নেই। দুজনের হাত ঘামে ভিজে গেছে। দুজনের শুকনো বাঁশপাতার উপর দিয়ে চলার শব্দ ছাড়া আর কোনো শব্দ নেই। হঠাৎ আমাদের সামনে একটা বাঁশ ভেঙে পড়লো। বাবা জোরে করে গায়ত্রি মন্ত্র জপ করতে লাগলো আর আমাকে প্রায় টেনে দৌড়ে চলে আসলো সেই ভেঙে পড়া বাঁশ এর পাশ কাটিয়ে।

কোনরকমে হাঁফাতে হাঁফাতে দুজনে বাড়ির উঠোনে এসে পরলাম। গ্রামের শুরুতেই আমাদের বাড়ি।
সেইদিন রাত থেকে আমার প্রচন্ড জর। বাবা সোজা চলে গেলো ভোলা গুনীনের কাছে। বাবা খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে যে কেনো আমার জর এসেছে। ভোলা গুণীন এসে আমার কপালে কিছু একটা শক্ত মতো ঠেকলো। তারপর আমার হাতটা টেনে নিয়ে একটা মাদুলি বেঁধে দিল। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। মা চা করে দিল বাবা আর ভোলা গুণীনের জন্য। চা খেতে খেতে গুনীন বাবাকে বলতে লাগলো মাদুলি বেঁধে দিয়েছি কোনো ভয় নেই কালকের মধ্যেই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু কাল সন্ধ্যাবেলায় ঠিক কি হয়েছিল আমাকে একটু খুলে বলো। বাবা পুরো ঘটনা ভোলা গুনীনকে বললো।

সব শুনে ভোলা বললো খুব জোর বেঁচে গেছ। শুধু তোমার পৈতে ছিল বলে আর গায়ত্রী মন্ত্রটা ঠিক সময়ে জপ করেছ বলে কোনো ক্ষতি করতে পারেনি। এর পর ভোলা চা শেষ করে চলে গেলো। সত্যি পরেরদিন আমার জর একদম সেরে গেলো। ভোলার কথা অনুযায়ী মাদুলিটা আমাকে আরো দশদিন রাখতে হবে।

এরপর আর কিছু হয়নি। কালীপূজা তে খুব মজা করলাম। প্রদীপ জ্বালালাম, ফুলঝুরি জ্বালালাম। পাড়ার ছেলেদের সাথে বাজি পুড়িয়ে বাড়ি গেছি খেতে, তাপস আমাকে ডেকে নিয়ে গেলো রতনের বাবার নাকি ভুত চেপেছে। আমি মা বাবা গেলাম দেখতে। গিয়ে দেখি ঘরের ভিতরে রতনের বাবার পাশে তাপসের বাবা আর রতনের দাদু বসে আছে আর রতনের বাবা শুয়ে শুয়ে ভুল বকছে। কেউ একজন গিয়েছে ভোলাকে নিয়ে আসতে।

হঠাৎ রতনের বাবা বলতে লাগলো কিরে গুনীণ ডাকছিস? আরে আমার কি হয়েছে যে গুণীণ ডাকছিস। আরো কত কি বলতে লাগলো। মিনিট দশেক পর ভোলা এলো এসে আমার বাবার কানে কানে কিছু বলে দিল আর একটা বড়ো লোহার গজ পেরেক দিল। আমাদের বললো দূরে সরে যেতে। বলে সে দরজার সামনে বসল। বাবা ভিতরে গেলো আর গজ পেরেকটা নিয়ে বিছানার নিচে ঢুকিয়ে দিল। তারপর তারা তিনজনে রতনের বাবাকে ভালো করে চেপে ধরলো। আমরা বাইরে থেকে সব দেখছি। তখন কি জোর তার গায়ে, তিনজনকে এই ফেলে দেয় অবস্থা। ভোলা রতনের মা কে বললো একটা চায়ের কাপ দিতে। কাপটা হাতে নিয়ে তার ভিতর সাদা গুড়ো মত কি একটা দিয়ে তাতে একটু গঙ্গাজল দিল আর দেওয়া মাত্রই কেমন গাঁজা উঠতে লাগলো আর বিকট একটা গন্ধ বেরোতে লাগলো।

ভিতর থেকে রতনের বাবা ভোলাকে গালি দিতে লাগলো। এবার ভোলা চিৎকার করে জিজ্ঞেস করলো কে তুই? রতনের বাবা বললো বলবনা। এবার ভোলা কি একটা মন্ত্র বলে ছোট একটা খড়ের ঝাড়ুর মত কিছু একটাতে ওই কাপের জল লাগিয়ে রতনের বাবার দিকে ছুড়ে দেয়। আর তখনই চিৎকার করে বলে ওঠে আমার নামে ভবেশ। আমার বাড়ি দুর্লভপুর গ্রামে। ভোলা চিৎকার করে বলল একে কেনো ধরেছিস? রতনের বাবা বললো আমি সবে একটু শুয়েছিলাম আর এই ব্যাটা গিয়ে আমার গায়ে মুতে দিল। একে আমি ছাড়বোনা। ভোলা বললো আগেরদিন বামুনের ছেলের ক্ষতি করতে চেয়েছিলিস কেনো। রতনের বাবা বললো ওটা একটু মজা করছিলাম ভয় দেখানোর জন্য। ভোলা বললো যাইহোক তুই এখন এর শরীর থেকে যা। রতনের বাবা বললো না আমি জানিনা।
ভোলা – তবেরে বলে আবার সেই ঝারুতে জল লাগিয়ে গায়ে ছিটিয়ে দিল।
রতনের বাবা – ঠিক আছে ঠিক আছে চলে যাচ্ছি আর দিসনা, খুব লাগছে।
ভোলা – আমি কিকরে বুঝবো তুই চলে গেছিস?
রতনের বাবা – আমি যাওয়ার সময় পুকুরপাড়ের শিরীষ গাছের একটা ডাল ভেঙে দিয়ে যাবো।
ভোলা – ঠিক আছে।

বলা মাত্রই রতনের বাবা অজ্ঞান হয়েগেলো। আর তখনই পুকুরপাড়ের শিরিষ গাছের একটা মোটা ডাল ভেঙে পরলো পুকুরে। কিছুক্ষণ পরেই রতনের বাবার জ্ঞান ফিরে আসলো।

ধন্যবাদ বন্ধুরা গল্পটি পড়ার জন্য। আশাকরি গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে। যদি ভালোলাগে থাকে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। খুব তাড়াতাড়ি আবার নতুন একটি গল্প নিয়ে আসবো।