কত টিকেছে রয়? জিজ্ঞেস করল চিকা। আজ রাতের খরচ উঠে গিয়েও বেঁচে যাবে। কাল থেকে তো আমরা সবাই স্বর্গবাসী। গোয়া সিমলার পর আর কিছু ভেবেছিস? দিমাগ বহুৎ চটকে আছে মাইরি। একমাস স্রেফ খালাস হয়ে যেতে চাই এসব থেকে। উত্তর দিল রয়। বস আমার ওই আইটেম দুটোকে আরো একবার লাগবে। এটা ম্যানেজ করে নিও তোমরা। আবদারের সুরে বলল ইয়াগো। চিকা হেসে বলল- হ্যাঁ তুই তো মানুষ না ঘোড়া। অনতিদূরে হেলেদুলে নৃত্যরত দুই সঙ্গিনীকে নিকে একবার আড়চোখে দেখে নিয়ে সে বলল- কাল ছেড়ে দেব আমার ভাগ তোর জন্য। চিকা জানে রমণীদের ব্যাপারে ইয়াগো কে ছাড় দিতেই হবে। এই একটা ব্যাপারে ও নাছোড়। যাকে ওর লাগবে তো লাগবেই। নইলে ছেলের মাথায় আগুন লেগে যায়। আর ওর হাতের গুন্ডা গুলো কন্ট্রোলে না থাকলে মহানগরীতে ওদের দাপট দালালি অসম্ভব। বোতলের অবশিষ্ট পানি ও এক নিঃশ্বাসে গলাধঃকরণ করে মনের সুখে মেয়ে দুটোর সাথে নাচতে থাকে ইয়াগো। Bangla Bhuter Golpo
ওরা ফিরছে দুর্গাপুরের আশেপাশের কিছু গ্রাম থেকে। সামনে ভোট। পার্টির ক্যাডারদের অস্ত্র আর ক্যাশ সাপ্লাই দিতে ওদের পাঠিয়েছিল এক নেতা। গ্রাম্য ক্যাডার গুলোকে বোকা বুঝে চিকার ইশারায় কিছু ক্যাশ সরিয়ে রেখেছে রয়। মেয়ে দুটোর সাথে আগে থেকেই যোগাযোগ করা ছিল। ওদের পিকআপ করে ওরা চেক ইন করে কল্পতরু হোটেলে। ম্যানেজার সেলুকাস না থাকায় সুবিধেই হয় ওদের। হোটেলের নিয়মানুসারে 139 নম্বর রুমে কাউকে থাকতে দেওয়া হয় না। এক্সট্রা টাকা অফার করে মেয়ে দুটোর জন্য রুমটা নিতে বিশেষ অসুবিধা হয়নি ওদের।
Vuter Golpo এই হোটেলের বদনাম আছে সেটা জানিস তো চিকা? জিজ্ঞেস করে রয়। হুম। 139 নম্বর রুম টা বিশেষ করে। রহস্যজনক মৃত্যু আত্মহত্যা, কিন্তু কে করে কেউ জানে না। এটাই তো লাফরা। উত্তর দেয় চিকা। তারপর থেকে এই ঘরে নাকি মাঝে মাঝে হঠাৎ আলো জ্বলে ওঠে। মানুষের গলার আওয়াজ পাওয়া যায়। ইত্যাদি অনেক অদ্ভুত ঘটনা কিন্তু ঘটে। ফাটছে নাকি তোর? রয় ভ্রু নাচায়। ভয় তোর লাগা উচিত। জীবনে এত পাপ করেছিস। চিকা একটুও না ঘাবড়ে বলে ওঠে- তাই নাকি? তুই কি তাহলে ধোয়া তুলসী পাতা? চিকা উদাস হয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে বলে- অবশ্যই না, তবে তোর মধ্যে নিষ্ঠুরতা একটু বেশি। জমি জায়গা বেচবার জন্য গাজোয়ারি আমিও করি। তবে ছোট ব্যবসায়ী যাদের একটা দোকান সংসারের একমাত্র সম্বল তাদের দোকানগুলো তুলতে সত্যিই মন চায় না। Bangla Bhuter Golpo তবু করতে হয়। অবিনাশ কে মনে আছে তোর? রয়েল স্মৃতিতে একটা মৃদু তোলপাড় হয়ে যায়। চাকরির লোভ দেখিয়ে অবিনাশ নামে এক সরল ছেলের কাপড়ের দোকান তুলে দিয়েছিল ওরা। বালিগঞ্জের ওই একটা মাত্র দোকান ওর গোটা পরিবারের একমাত্র সম্বল ছিল। এক বছর পর ওখানে বিশাল বড় শপিং মল তৈরি হয়ে যায়। চিকার সায় ছিল না কাজটায়। কিন্তু ওরা না করলে অন্য কাউকে দিয়ে ঠিকই করিয়ে নিত নেতারা। প্রচুর টাকার কেস ছিল ওটা। ও ভালোমতোই জানত যে এদের নিয়ে নেতাদের বিশেষ মাথা ব্যাথা নেই। শুধু অবিনাশ কেন? এরকম আরো অনেক দোকান ঝুপড়ি আমরা উচ্ছেদ করেছি সেই সময়। সেই কারণেই আজ তোর আমার হাত দিয়ে এতগুলো টাকা লেনদেন হয়। শহরের সব গুন্ডা আমাদের হাতের মুঠোয় থাকে। Bangla Vuter Golpo আমাদের ক্লাবে যখন বিগ বাজেটের পূজা হয় আমরা গাল ভরে ক্যামেরার সামনে বড় বড় বুলি ঝাড়ি। নেক্সট ইলেকশনে হয়তো টিকিট ও পেয়ে যাব। এখন এসব ভেবে তুই খলিফা হয়ে যাবি না। রয় উত্তেজিত হয়ে ওর গ্লাসটা ভেঙে ফেলে। রক্তে ভিজে যায় হাত। সকলে দৌড়ে আসে। একজন স্টাফ ফাস্টেড বক্স এনে দেয়। চিকা ওর হাতে ব্যান্ডেজ করতে থাকে। এতো মাথা গরম করলে চলে? বলে চিকা। মেয়েগুলো খিলখিল করে হেসে ঘরে যাবার ইচ্ছা প্রকাশ করে। রয়ের শুধু মনে হতে থাকে গ্লাসটা ও ইচ্ছে করে ভাঙেনি। ওর হাতে যেন চাপ দিয়েছিল অন্য কেউ, অদৃশ্য কেউ। Ghost Stories in Bengali
আমি রুমে যাচ্ছি তোরা আসতে থাক। বলে সকলকে অবাক করে দিয়ে রয় হুড়মুড় করে উঠে গেল পাঁচ তলায়। নিস্তব্ধ করিডরে যেন মৃত্যুর শূন্যতা। ওর কানে সাময়িকভাবে ভেসে এলো তিন বছর আগে বালিগঞ্জের হকারদের আর্তকান্না। কান চাপা দিয়ে টলতে টলতে 139 নম্বর রুমের দরজা খুলতেই দুম করে জানালাগুলো হাট করে খুলে গেল। আর সো সো করে ঠাণ্ডা বাতাস এসে জমিয়ে দিল রয় কে। আলো জ্বালাও সঙ্গে সঙ্গে ওর মনে হল ঘরের কোণে কেউ বসে ছিল সাদা চাদর মুড়ি দিয়ে। ঠান্ডা বাতাস টা কানে কানে যেন বলে গেল- সময় গুনতে থাকো। Bengali Bhuter Golpo
ঘোলাটে দৃষ্টি নিয়ে রয় বিছানায় বসে পড়ল। ছেড়ে দিল টিভিটা। খবরের চ্যানেলে একটা নিউজ দেখে ওর আরও মাথাটা বিগড়ে গেল। অবিনাশ বিশ্বাস নামে এক যুবকের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার। রয় এর মনে হতে লাগল ও ভীষণ রকম একা। হঠাৎই টিভিসহ ঘরের সব বাতি নিভে গেল। দূর থেকে ভেসে আসা ঠাণ্ডা বাতাসের আওয়াজ টাও যেন একটা গা ছমছমে ভাব জাগিয়ে তুলল রয় এর শরীরে। অস্পষ্ট আলোয় ঘরের পেইন্টিং গুলো কেমন যেন ভৌতিক হয়ে উঠেছে। রয় এর মনে হলো ছবির মেয়েগুলো হাসছে ওর দিকে তাকিয়ে। না একবার গা ধুয়ে নেওয়া যাক- ভাবল রয়। বাথরুমের দিকে তাকাতেই ও চমকে উঠলো। অন্ধকারে কে যেন দাঁড়িয়ে আছে গা মিশিয়ে। ও মোবাইলের আলো ফেলল। কাউকে দেখতে পেলো না এবার। আলো সরাতেই আবার সেই অশরীরী কারো উপস্থিতির অনুভূতি। ওয়েবার বন্দুকটা বের করে আলো জ্বেলে ওই দিকে এগিয়ে গেল। বাথরুমের খুব কাছে যেতেই ও পরিষ্কার অনুভব করলো ওর কাঁধে একটা শীতল স্পর্শ। Bangla Vuter Golpo চমকে ঘুরে পেছনে তাকাতেই ও যেটা দেখলো তাতে ওর মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদা চাদরে মোড়া একটা অবয়ব। শুধু গলাটা দেখা যাচ্ছে যেখানে মোটা একটা ফাঁসের চিহ্ন। রয় এর মনে হচ্ছিল ও পাগল হয়ে যাবে। এক ভয়ঙ্কর অন্ধকারে তাকে ডুবে যেতে হবে যেখানে কোনদিনও আলো আসবে না। সাদা ফ্যাকাশে একটা হাত বেরিয়ে এল মূর্তিটার চাদরের ভেতর থেকে। রয় স্পষ্ট দেখল সেই কঙ্কালসার হাতে ঝুলছে একটা ফাঁসির দড়ি।
মেয়ে দুটোর সাথে খুনসুটি করতে করতে যখন ইয়াগো আর চিকা 139 নম্বর রুমে ঢুকলো তখন দেখল চুপচাপ বসে আছে বিছানায়। কিরে শরীর খারাপ করলো নাকি? জিজ্ঞেস করল চিকা। মুখ ফুলিয়ে আছো কেন হিরো? বউ বকেছে? একটা মেয়ে খিলখিল করে হেসে উঠলো। ট্রুথ অর ডেয়ার খেলা যাক। গম্ভীরভাবে বললো রয়। মাথা খারাপ হয়েছে নাকি তোর? বিরক্ত হয়ে বলল ইয়াগো। একটি মেয়ে বললো চলো খেলি কিছুক্ষণ। তোমার তো তরই সয়না। খ্যাপা ষাঁড়ের মতো করোনা তো। কিন্তু চিকার মন সাময়িক ভাবে চটকে উঠলো। কিন্তু কিছু বললো না ও।
অগত্যা খেলা শুরু হল। প্রথমেই এল চিকার পালা। ট্রুথ - বলল চিকা। রয় গম্ভীরভাবে ওকে প্রশ্ন করল- লাস্ট জমির কেসটায় নেতার ফান্ডে কত দিয়েছিলি? চিকা অবাক হয়ে গেল। প্রতিটা ডিলে রয় আর ও যা দেয় ইয়াগো কে তার দ্বিগুণ বাড়িয়ে বলে। এবং সেই টাকা ওরা দুজনে ভাগাভাগি করে নেয়। এই ধরনের মশকরা করার অর্থ কি? ইয়াগো তাকিয়েই আছে ওর দিকে ডেবডেব করে। Bangla Bhuter Golpo দশ পেটি- জোর গলায় মিথ্যাটা বলল চিকা। রয় এর মুখে একটা অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠল। একদম না 5 পেটি। সব ডিলেই আমরা এভাবে ইয়াগো কে উল্লু বানিয়ে থাকি। তারপর ওর দরকার মতো ওষুধ দিয়ে দিই ওকে। এতদিন পর্যন্ত হিসাব করলে এক খোকা করে প্রায় ঢুকে গেছে আমাদের পকেটএ। আমার সাথে চুকলি বাজি? চেঁচিয়ে উঠলো ইয়াগো। রয় নেশার ঘোরে বাজে বকছে। এই রয় তুই ইয়েরা হোয়ে গেছিস নাকি বে? চিকার গলাটা যেন কেঁপে উঠলো। তাই নাকি? ফোন করব এমএলএ সরকারকে? ব্যাঙ্গের হাসি হেসে উঠল রয়। এই তোরা ফোট এখন। বন্দুক বের করে মেয়েদুটোকে বলল ইয়াগো। সুড়সুড় করে সরে পড়ল ওরা। এরপর বন্দুকটা দুজনের দিকে তাক করে ও বলল- আমাকে টুপি পরানো। ঠিকঠাক হিসেব বুঝিয়ে দে নইলে তোদের দুটোকেই আজ ওপরে পাঠাবো। চিকা জানে ইয়াগোর মাথা গরম হয়ে গেলে ও যেকোনো কিছু করতে পারে। Bangla Bhuter Golpo ও নিজের দলেরই একজন কে সুট করেছিল স্রেফ জুয়ার আড্ডায় কয়েক হাজার টাকার চিটিং করার জন্য। ও সভয়ে বলে উঠলো- পাগল তুই ইয়াগো? এসব মজা করছে রয়। বল কিছু ভাই। কাতরভাবে রয় এর দিকে তাকাল চিকা। আমার শেয়ার রেডি আছে ইয়াগো। বাথরুমে সরিয়ে রেখেছি স্যুটকেসে। আজি সব হিসাব চুকতা। শান্তভাবে বলল রয়। ইয়াগোর বন্দুক ঘুরে গেল চিকার দিকে- আমি ছাড়া তুই কি? আমার এরিয়া থেকে সবচেয়ে বেশি মস্তান সাপ্লাই দি গাং এ। কবে দিবি বল শেয়ার? ওই ওই শহরে গেলে। ঝাড়ু টা নামা তুই। চিকার কথা শেষ হতে না হতেই লালচে চোখ নিয়ে তাকালো ওর দিকে রয়। গত আইপিএলে এন্টনির কাছে সব হেরে গেছিস চিকা ভুলে গেলি? ওই টাকা দিয়েই তো অত বড় বিল্ডিং টা কিনল ব্যাটা। চিকার কথা জড়িয়ে আসতে লাগলো। রয় আবার বলল- দেখছিস কি ইয়াগো? উড়িয়ে দে মালটাকে। চিকা কিছু বলার আগেই গর্জে উঠল ইয়াগোর বন্দুক। চিকার শরীরটা আছড়ে পড়ল মেঝেতে। Bangla Bhuter Golpo
রয় আবারো শান্ত ভাবেই বললো যেন কিছুই হয়নি- বাথরুমে সামান রাখা আছে। নিয়ে আয়। পাতলা হই। ইয়াগোর মাথা ঠান্ডা হয়েছে। কিন্তু এক গভীর বিষাদ গ্রাস করেছে এবার। বহু দিনের সঙ্গী ছিল চিকা। তবে অনেকবার পয়সা এদিক-ওদিক ও করত। তাই যথার্থই রাগ জমে ছিল ওর। আর এটা তো ওর ভাগেরই টাকা। তবু ওর মনে হচ্ছিল ট্রিগারে কি আদৌ ও স্বেচ্ছায় চাপ দিয়েছিল? বন্দুকটা ছুড়ে ফেলে ধীর পায়ে ও প্রবেশ করল বাথরুমে। Sera Bhuter Golpo আর তারপর ও যা দেখলো তাতে ওর মনে হলো ও দুঃস্বপ্ন দেখছে। পা দুটো ঠকঠক করে কাঁপতে লাগল ওর। যেন শূন্যের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বাথরুমের ছাদ থেকে ঝুলছে রয় এর দেহ। গলায় মোটা দড়ি বাধা। জিভ বেরিয়ে আছে। চোখ দুটো বিস্ফোরিত অস্বাভাবিক আতঙ্কে।
গল্পের পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন। আর গল্পটি কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে।
রুম নম্বর 139 চতুর্থ পর্ব - রুম নম্বর 139
0 Comments