রুম নাম্বার 139 » বাংলা ভূতের গল্প » Bangla Bhuter Golpo » Ghost Stories in Bengali


পৃথিবীতে এমন অনেক জায়গা আছে যেগুলো ভুতের আড্ডা। আমাদের ভারতবর্ষে তো যথেষ্টই। সেরকমই এক ভুতুড়ে বাড়ির গল্প এটা। যে বাড়ি একটু বেশি সাংঘাতিক। এই গল্প কিন্তু বিভিন্ন সত্য ঘটনাকে কল্পনার আঠায় জুড়ে তৈরি। গল্পটি অনেক বড় তাই পড়ুয়াদের সুবিধার্থে এটিকে বিভিন্ন পার্ট এ ভাগ করে দেওয়া হলো। Bangla Bhuter Golpo


দুর্গাপুর শহরের বাইরে নির্জন এক স্থানে অবস্থিত একটি পরিত্যক্ত প্রায় হোটেল। হোটেল কল্পতরু। বছর পাঁচেক আগেও এখানে ছিলো জনসমাগম। তিন তারা এই হোটেলের সাথেই লাগোয়া থাকতো রেস্টুরেন্ট ও বার। রাত জেগে আসর জমাতো বাইরে থেকে আসা যুবকের দল। গোপনে হোটেল রুমে রাত কাটিয়ে যেত কপোত-কপোতীরা। আজ সেই হোটেলে প্রায় জনশূন্য। কেউ যদি ভাবেন পুলিশের জন্য তাহলে ভুল করবেন। এর মূল কারণ হল রুম নাম্বার 139। গত পাঁচ বছরে হোটেলটির এই রুমেই ঘটে যায় বারোটি মৃত্যু। প্রত্যেকটি মৃত্যুই অত্যন্ত স্বাভাবিক অথবা আত্মহত্যা। পুলিশ আজ অব্দি কোন মৃত্যুর পেছনে কারণ ইনভলভমেন্ট খুঁজে পায়নি। পাইনি নূন্যতম কোন ক্লু।


Bhuter Golpo in Bengali নাকি আততায়ী এমন কেউ বা কারা যাদের হদিস পাওয়া নশ্বর মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। তারা হয়তো শরীরী নয়।


দ্রুত রটে যায় হোটেল কল্পতরু একটি হানাবাড়ি। এবং তার 139 নম্বর রুমে প্রবেশ করার অর্থ একটাই। মৃত্যু!


যাইহোক এই গল্পে আছে আর একজন পাত্র- সুব্রত ভৌমিক


সুব্রত পেশায় সাংবাদিক। আর ওর নেশা ঘুরে বেড়ানো আরো ভালো করে বলতে গেলে ভূতের সন্ধানে ঘুরে বেড়ানো। এই নতুন অভ্যাসটার পেছনে অবশ্য একটা কারণও আছে। মাসখানেক আগে উত্তরবঙ্গের এক গ্রামে বেড়াতে গিয়ে ওর একটা ভূতুড়ে অভিজ্ঞতা হয়। সেই অভিজ্ঞতাকেই একটু মসলা মিশিয়ে সুরোজিত করে ও পরিবেশন করে ওরি কাগজের শনিবাসরীয় গল্প পাতায়।


Sera Bhuter Golpo ব্যাস কি যে জাদু ছিল সেই লেখায় কে জানে। গল্প মারকাটারি রকমের হিট করে যায়। পরিচিত মহলে 'এই প্রতিভাটি তো জানা ছিল না সুব্রত' এরকম গোছের অভিবাদন বার্তায় আপ্লুত হয়ে পড়ে সে। তখনি ও ঠিক করে নেয় যে সুযোগ পেলে আর একবার ভূত নিয়ে ও কিছু লিখবে।


ব্যক্তিগত জীবনে অনেক ঝড় গেছে সুব্রত এর। ছোটবেলায় বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয় তারপরে ও দাদুর কাছে মানুষ হয়। খবরের কাগজে চাকরি করে জুটিয়ে দু বছর প্রেম করে বিয়ে করে নিলিমাকে। বছরখানেক পর তাদের একটা ফুটফুটে মেয়ে হয়। সুব্রত নাম রাখে নির্জরা। ডাকনাম নিরু। মেয়ে বাবাকে পেলে সব ভুলে যায় বাবার কাছেই যেন ওর দুনিয়ার সুখ বাধা। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস ছয় বছর বয়সে শ্বাস কষ্টতে ভুগে নিরু ওদের ছেড়ে চিরতরে চলে যায়। তারপর থেকে সুব্রত আর নীলিমার সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে। ক্রমশ একসাথে থাকা ও ছেড়ে দেয় তারা। একলা বন্ধনহীন সুব্রতকে পেয়ে বসে ভ্রমণের নেশা। Bhuter Golpo


সুব্রত কল্পতরু হোটেলের খোঁজ পাওয়া মাত্রই ঠিক করে যে সে অবশ্যই একরাত থেকে আসবে রুম নম্বর 139 এ। যা কপালে লেখা থাকবে তাই হবে। মুখে চুরুট গুঁজে player's হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া চালিয়ে সে একদিন স্টার্ট দেয় তার জীপে।


কল্পতরু হোটেলের 139 নম্বর রুমে সেটাই ছিল অনু বর্মনের শেষ রাত। আর কল্পতরু হোটেলে প্রথম অলৌকিক মৃত্যু। Bengali Bhuter Golpo


সেই রাতে বাতাস ছিল অশান্ত। থেকে থেকে ভেসে আসছিল তার উন্মত্ত আর্তনাদ। রেলিঙে থাকা জল তরঙ্গের স্বরেও কেমন যেন পরলৌকিক বিষাদ। 


সোশ্যাল সাইটে সদ্য আলাপ হওয়া একটি ছেলে ও তার কিছু বন্ধু বান্ধবীর সাথে সে এসেছে ঘুরতে এখানে। পার্টি করে সে আজ ক্লান্ত। তাড়াতাড়ি ফিরে এসেছে নিজের রুমে, রুম নম্বর 139 এ। নিচে এখনো চলছে রঙিন আসর।


অনু জেগেই ছিল সে রাতে। নাইট বাল্ব এর আবছা আলো যেন রুমে ছড়িয়ে থাকা আসবাবপত্র গুলোকেও একটা ভৌতিক প্রদান করছে। হঠাৎ কারেন্ট চলে গেল। অনু সেই অন্ধকারে যেন আরও কিছু শব্দ শুনতে পেল। যেন এক অভ্রান্ত পায়ের আওয়াজ। বুকের ভেতরটা ডিপ ডিপ করে উঠলো তার। বেশি নেশা হয়ে গেল না তো আজ? Vuter Golpo


আবার সব শব্দ থেমে গেল। নেমে এলো গভীর নিস্তব্ধতা। আচমকা নাইট বাল্ব জ্বলে উঠলো। আর অনু সভায় দেখলো দরজাটা ধীরে ধীরে খুলে যাচ্ছে। আর একটা হাতের বড় ছায়া পড়ছে দেওয়ালের উপর।


দরজাটা সশব্দে খুলে গেল। জুব্বা ঢাকা একটা মূর্তি ঘরে ঢুকলো, অবর্ণনীয় আতঙ্কের সঙ্গে অনু দেখলো তার মৃত প্রাক্তন প্রেমিকের তোয়ালে জড়ানো মুখটা তার দিকে তাকিয়ে ভয়ংকরভাবে হাসছে। 


সেই সৌভিক যাকে সে চিরকাল ব্যবহার করে এসেছে নিজের প্রয়োজনে। তার শেষ সময়েও কথা শুনাতে ছাড়ে নি তাকে। সৌভিক আত্মহত্যার আগে বলেছিল তাকে- সে আসবে তার শেষ সময়ে তাকে নিজের সাথে পরলোকে নিয়ে যেতে।


মূর্তিটা নিঃশব্দে এগিয়ে এসে তার ভ্রু এর উপর ঠান্ডা হাতটা রাখল আর অনু বর্মনের আত্মা একটা উন্মাদ চিৎকার করে দেহ ছেড়ে চলে গেল অনন্তের পথে।


আর্তনাদ শুনে হুড়মুড় করে ঘরে এসে পড়ল ওর বন্ধু বান্ধবীরা। অনু বর্মনের নিথর খোলা চোখে তখন ও অস্বাভাবিক আতঙ্ক ছেড়ে যায়নি। Bangla Vuter Golpo


পুলিশ এল, কিন্তু তাদের রিপোর্টে লেখা রইল অনু বর্মন এর মৃত্যুর কারণ তারা হাটের আচম্বিত কলাপ্স।


সৌভিকের নিরব প্রতিশোধ পূর্ণ হল।





সারাদিনের ধকলে ছেড়ে সন্ধ্যের দিকে ফেরার পথে হোটেলটা পেয়ে গেল রজত। আর সত্যিই ওর ড্রাইভ করতে করতে ভালো লাগছিল না। রজত চেকিং করল কল্পতরু হোটেলে 139 নম্বর রুমে। রজত পেশায় ফ্যাশন ফটোগ্রাফার। আজকাল বেশ নাম হয়েছে তার।


হোটেল সংলগ্ন রেস্টুরেন্টের রান্না খাসা খুব খিদে পেয়েছিল রজতের। পরম তৃপ্তি সহকারে আহার শেষ করে ও পঞ্চম ও শেষ হুইস্কির পেগটায় চুমুক দিল। তারপর বেশিনে হাত ধুতে গেল। এখন অক্সিজেন তাই টুরিস্তের বাড়বাড়ন্ত নেই। একপ্রকার নির্জনতাই যেন বিরাজমান আজ এই হোটেলে। বেসিন ও টয়লেট একটু দূরে।


রজত হাত-মুখ ধুয়ে আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে গেল। একটা সাদা চাদর পরা আবছা নারীমূর্তি যেন দাঁড়িয়ে আছে তার পেছনে। কদাকার ঐরূপ রজতের দিকে তাকিয়ে আছে যার মুখে এক বীভৎস কৌতুকের আভাস। রজত চমকে উঠলো আর সঙ্গে সঙ্গেই লোডশেডিং হয়ে গেল। গা শিরশির করে ওঠে রজতের। তার মনে হয় অন্ধকারেও যেন সেই অপার্থিব মানবী তাকে দেখে চলেছে একটানা। একটা অস্পষ্ট নিঃশ্বাস ফেলার আওয়াজও যেন হচ্ছে তার খুব কাছে। বুক কাঁপতে থাকে রজতের। নড়াচড়া করতে ও যেন ভয় লাগছিল তার। আবার আলো জ্বলে ওঠে। না কেউ নেই এবার তার পেছনে। কিন্তু কেউ যে ছিল একটু আগে এ ব্যাপারে রজত নিঃসন্দেহ। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে ওই নারী যেন তার চেনা কেউ। কি হচ্ছে এসব তার সাথে?


রজত রুমে ফিরে আসে। নিজেকে রিল্যাক্স করার জন্য ব্যাগ থেকে বের করে শুকনো পাতার একটা প্যাকেট। সিগারেটে ওটা পুড়ে বুক ভরে টেনে নেয় রজত। শান্তি এখন নিশ্চিন্তে ঘুমানো যেতে পারে। হঠাৎ তার মনে হয় অ্যাশ ট্রে থেকে বেরোনো ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে যেন সৃষ্টি করছে এক মুখাবয়ব। আর ঘরে যেন বেড়ে চলেছে ঠান্ডা ঠান্ডা ভাব। রজতের আবার মনে হয় এই মুখ তার চেনা। আতঙ্কে লাইট অফ করে দেয় সে। গাঢ় অন্ধকার। রজতের মনে হচ্ছিল এই অন্ধকার থেকে যে কেউ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়তে পারে। ভয়ে ওর গলা শুকিয়ে যাচ্ছিল।


এবার ওর সারা শরীর নিস্তেজ করে দিয়ে একটা নারীকন্ঠের বীভৎস হাসির আওয়াজ ভেসে এলো। সাথে একটি শিশুর কান্না। এবার ও স্পষ্ট বুঝতে পারলো এই কণ্ঠস্বর আর সেই নারী মূর্তি তার অবশ্যই পরিচিত। অন্ধকারে ভেসে এলো একটা হিংস্র খোনা গলা- আমাকে দিনের পর দিন ভোগ করে ও তোর শান্তি হলো না? মেরে ফেললি আমাকে আমার বাচ্চা শুদ্ধ। Ghost Stories in Bengali Font


রজত বুঝতে পারলো আজি ওর শেষ রাত। বুকে যেন হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে। শরীর এতটাই অসাড় হয়ে পড়েছে যে রুম সার্ভিস কে ডাকার ক্ষমতা পর্যন্ত সে হারিয়ে ফেলেছে। স্পষ্ট ঠান্ডা নিঃশ্বাস মুখের ওপর অনুভব করলো ও। একটা বরফের মত ঠান্ডা কিছু ওর গলা চেপে ধরল। রজত বুঝতে পারল মরতে ওকে হবেই কিন্তু তার আগে কিছু কাজ শেষ করে যেতে হবে নয়তো মৃত্যু হবে আরও যন্ত্রণার।


পরদিন যথারীতি পুলিশ এল। রজতের ঘরে নিষিদ্ধ শুকনোপাতা আবিষ্কার করে ইন্সপেক্টর বললেন- মারিজুয়ানা বেশি খেলে হৃদস্পন্দন খুব বেড়ে যায়। বুঝলে পান্ডে? ইনি তো আবার ড্রাংক ও ছিলেন। কনস্টেবল পান্ডে খুব বেশী কিছু না বুঝলেও সম্মতি সূচক মাথা নাড়লো। রজতের মোবাইলটা ঘাঁটতে থাকলো ইন্সপেক্টর। রেকর্ডিং পেলেন সেখানে, প্লে করে দিলেন তিনি।


আমি রজত সাহা। আমার একটা কনফেশন আছে। আমি রেপ করেছি। সাথে মার্ডার। একটা নয় দুটো মার্ডার। তিন বছর আগে আমার সাথে প্রীতির পরিচয় হয়। প্রীতি আমার গার্লফ্রেন্ড ছিল আর ও মডেল হতে চেয়েছিল। আমি ওকে মডেল বানানোর ও বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে সব রকম ভাবে ভোগ করি। কিছুদিন পর ওর পেটে বাচ্চা আসে। ও আমাকে বিয়ের জন্য তাগাদা দিতে থাকে। কিন্তু ততদিনে আমার মন উঠে গেছে ওর থেকে। তখন আমার নাম হয়েছে। মাই ইন্টারেস্ট অন সুপার হট অনু বর্মা। প্রীতি উপায় না দেখে পুলিশে খবর দেবে বলে শাসায় আমাকে। আমি বুঝতে পারি যে প্রীতি আমাকে খুব ভালবাসলেও ওকে নিয়ে আমি চলতে পারব না। বলা ভালো চাইতাম ও না। দিন বার্মা গেভ মি এ গ্রিট প্ল্যান। আই ফলসিফাই প্রীতি ফর মেরেজ। ওর তখন চার মাসের পেট। শিলিগুড়ির সাইডে একটা নির্জন বাড়িতে নিয়ে যাই ওকে। তারপর নিজে হাতে ওকে খুন করি। এরপর আমার লোক ফিট করাই ছিল। সব ধামাচাপা দিতে কোন প্রবলেম হয়নি। দে বারিড হার আন্ডারগ্রাউন্ড। Bengali Ghost Story

আমি প্রীতির ভালোবাসা নিয়ে সিম্পলি খেলেছি। অলওয়েজ। আমি আরো মৃত্যু ও আনহোলি কাজের জন্য দায়ী। আই এম এ রুদলেস পিস অফ সিট। আই এম এ গিলটি।


গল্পের পরবর্তী অংশ পড়ার জন্য ওয়েবসাইট ফলো করুন অথবা আমাদের ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করুন। আর গল্পটি কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন কমেন্ট করে।


রুম নম্বর 139 দ্বিতীয় পর্ব - রুম নম্বর 139