নির্জন কটেজ | Nirjon Cottage | Bangla Bhuter Golpo | Ghost Stories in Bengali



নির্জন কটেজ | NIRJON COTTAGE




বন্ধুরা আজকের এই গল্পটি সুভম নামের একটি ছেলের গল্প। শুভম একটি ধনী পরিবারের ছেলে। শুভম এর বাবা মা তার একমাত্র সন্তান কে খুব ভালোবাসতেন তাই তারা সুভম এর কোনো সুযোগ সুবিধার অভাব রাখেননি। খুবই ভালো কাটছিলো তাদের জীবন, কিন্তু একদিন রাতে তাদের জীবন সম্পূর্ণ বদলে যায়।

একদিন সুভম তার বন্ধুর জন্মদিনে তাদের বাড়িতে ছিল। সন্ধেবেলা শুভমের বাবা মা গাড়ি নিয়ে সুভমকে বন্ধুর বাড়ি থেকে আনতে যাচ্ছিলো। বনের পথ দিয়ে যাচ্ছিল তাদের গাড়ি। হঠাৎ এক মহিলা অদ্ভুত ভাবে তাদের গাড়ির সামনে চলে আসে এবং শুভমের বাবা গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে এবং এক্সিডেন্ট হয়ে যায়। এক্সিডেন্ট টি এতোটাই নির্মমভাবে হয়েছিল যে মহিলা এবং সুভম এর বাবা মা ঘটনাস্হলেই মারা যান। বাবা মা মারা যাওয়ার পরে সুভম এর জীবন পুরো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

অন্য শহরে শুভমের কাকা কাকিমা থাকতো শুভম তাদের কাছে চলে গেলো। শুভমের কাকা কাকিমা তাকে খুব ভালোবাসতেন। তাদের কোনো সন্তান ছিলোনা। তারা সুভমকে নিজের সন্তানের মতোই মানুষ করতে সত্যি খুব খুশি হয়েছিলেন। যদিও শুভমের খুবই শোচনীয় অবস্থা, কিন্তু তার কাকা কাকিমা ছাড়া আর কোনো ভরসা ছিলোনা।

তারা তাদের বাড়ির সমস্ত ঝামেলা থেকে দূরে একটি নির্জন জায়গায় একটা ছোট্ট কটেজ থাকতে লাগল। কিছু দূরে শুভমের বাকি সব প্রতিবেশী আত্মীয় থাকা সত্ত্বেও সে খুব একাকীত্ব বোধ করতে লাগল, তার মৃত বাবা মা কে আরো মিস করতে শুরু করে। তবে তার কাকা কাকিমা তাকে খুব ভালবাসতেন এবং তারা তাকে সান্তনা দেওয়ার যথা সাধ্য চেষ্টা করেছিলেন এবং তারা তাকে কষ্ট পেতে দেখতে চাননি।

ধীরে ধীরে শুভম আরো ভালো বোধ করতে শুরু করলো। এবার সে হাসতে শুরু করলো। সে তার কাকা কাকিমার সাথে মানিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে তাদের ঘনিষ্ঠ হতে লাগলো তবে সব কিছুর মধ্যেও তার বাবা মা কে সে কিছুতেই ভুলতে পারছিলোনা।

একদিন রাতে শুভম জানালার কাছে দাঁড়িয়ে তার বাবা মা জন্য খুব কাঁদছিল হঠাৎ সে তার বাবা মা আত্মা কে দেখতে পায়। এবং সে খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।
পরেরদিন সকালে সে তার কাকা কাকিমাকে ডেকে সব কথা বলে। কিন্তু তারা কেউ তার কথা বিশ্বাস করেনি। তার কাকিমা বলল এটি খুবই সুরক্ষিত জায়গা এবং এটি তার দুঃস্বপ্ন হতে পারে, সবসময় সে বাবা মার কথা ভেবে কান্নাকাটি করে তাই হয়তো এমনটা হয়েছে।

পরদিন রাতে শুভম শুয়ে ছিলো হঠাৎ সে শুনতে পেলো ঘরের ভিতরে কারো হেটে চলার আওয়াজ। কিন্তু সে কিছুই দেখতে পেলনা কারণ তার ঘর খুব বেশি অন্ধকার ছিল।
 
পরেরদিন সকালে সে আবার তার কাকা কাকিমা কে আগেরদিন রাতের ঘটনা বলে। তারা চেয়েছিলেন যে শুভম যাতে হাসি খুশিতে থাকে এবং তার তার আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হওয়া দেখে তারা খুব খুশি ছিলেন কিন্তু আস্তে আস্তে সুভম এর হাসিখুসি চলে গেলো।

পরের কয়েক রাত শুভমের ঘুম হলোনা। চোখ বন্ধ করলেই সে ভয় পাচ্ছে যেটা তার স্বাস্থ্যের খুব ক্ষতি করতে লাগলো। তার কাকা কাকিমা বুঝতে পারছিলেন যে তারা তাদের সন্তানকে আস্তে আস্তে হারাতে চলেছিলেন আর তারা তাদের সন্তানকে বাঁচানোর জন্য কিছুই করতে পারছিলনা। তারা শুভমের স্বাস্থ্যের অবনতি দেখে কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলনা।

তারা তাকে একজন ভালো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যান। ডাক্তার চেকআপ করার পর জানান যে তার বাবা মা মৃত্যুর আঘাত এর জন্য তার এই দশা হয়েছে। তিনি সুভমকে কিছু ওষুধ দেন নিয়মিত খাওয়ার জন্য। যদি সে নিয়মিত ওষুধ না নেয় তাহলে তার মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
 
সেইদিন রাতে শুভম তার কাকিমার কাছে শুতে গেলো। ওষুধ খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলো শুভম হঠাৎ বাইরের হাওয়ায় জানালাটা খুলে গেলো। শুভম খুব ভয় পেয়ে গেল সে তার কাকিমা কে জাগালো তার কাকিমা উঠে জানালা বন্ধ করতে গিয়ে বাইরে যা দেখলো তাতে তার সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল।

সে দেখলো বাইরে জানালার পাশে গাছে শুভমের মায়ের ক্ষত বিক্ষত দেহটা ঝুলছে। আর সেটি তার দিকে চেয়ে হাসছে আর কি যেন বলার চেষ্টা করছে এবং তার হাত ধরে আর একজন কেউ ঝুলছে হয়তো শুভমের বাবা মুখটা ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা একেবারে থেতলে গেছে। ভয়ে সে বিছানায় চলে আসে এবং চিৎকার করে শুভমের কাকা কে ডাকার চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুতেই গলা থেকে আওয়াজ বেরোলো না। 

হঠাৎ তার চোখ চলে গেল ঘরের উল্টো দিকের জানালার দিকে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে শুভম আর তার গলাটা কাটা সেখান থেকে রক্তে মেঝেটা ভেসে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে পিছনে বিছানায় চেয়ে দেখলো সেখানেও শুভম বসে আছে আর তার দিকে চেয়ে চেয়ে হাসছে আর বলছে কাকিমা আমি আমার বাবা মা কে ফিরে পেয়ে গেছি। তারপর আর তার কিছু মনে নেই সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।

সকালে সুভম এর পঁচা দেহটা তার কাকা উদ্ধার করে জানালার কাছে গাছের নিচে ঝোপের ভিতর।
শুভমের মৃত্যু হয়েছিল দ্বিতীয় দিনেই, যেদিন সে ঘরের ভিতরে কারো হেটে যাওয়ার শব্দ পেয়েছিলো। তারপর সে অন্ধকারের ভিতরে দুজোড়া জ্বলন্ত চোখ দেখতে পেলো আস্তে আস্তে পুরো ঘর আলোয় ভরে গেল ওয়ার সে দেখতে পেল তার বাবা আর মা তাকে ডাকছে তাদের সাথে নিয়ে যাবে বলে। শুভম ছুটে চলে গেলো তার মায়ের কাছে।

শুভমের কাকিমা দীর্ঘ দুমাস হাসপাতাল থাকার পর তার শরীর কিছুটা ভালো হলো। তারা সেই কটেজ ছেড়ে তাদের পুরানো বাড়িতে ফিরে গেলো। খুব কান্নাকাটি করলো সুভমকে হারানোর জন্য।

ধন্যবাদ বন্ধুরা গল্পটি পড়ার জন্য। আশা করি গল্পটি আপনাদের ভালো লেগেছে। গল্পটি যদি আপনাদের ভালো লেগে থাকে তো অবশ্যই শেয়ার করবেন। আর নিজের মেইল দিয়ে সাবস্ক্রাইব করতে ভুলবেননা। যখনি আমি কোনো নতুন গল্প দেবো সেটি আপনার মোবাইলে সবার আগে চলে যাবে।